কবিতা- ডাইনী না আছি

ডাইনী না আছি
– সুমিত মোদক

 

 

আমি ডাইনী না আছি বাবু!
আমি ডাইনী না আছি …

ও গাঁ আমার আছে বাবু!
ও গাঁ আমার …

মরদ লোকটা সেই যে কয়লা খাদানে ঢুকলো,
আর বের হতে পারলো না ;
খাদানে সেই যে ধস এলো কেউ আর বের হল না;
চাপা পড়ে গেলো মাটির নিচে ;
পাওয়া গেলো না মরদেহটারে …
কতো লোক এলো, নেতা-মুন্ত্রী এলো;
বললো– টাকা দেবে, অনেক…অনেক টাকা;
কিছুই এলো না;

আমার ঘর আছে, জমি আছে,
আছে গতর …
চলে যেতো মোটা ভাত ডালে …
কিন্তু, যত ঝামেলা বাঁধলো এ শরীরটা নিয়ে,
এ যৌবনটাকে নিয়ে;
আবাদী জমিটাকে নিয়ে …
মরদ নাই, তাই ভাগ চায় ওরা;
দিতে না চাওয়াতে ওরা গাঁয়ে রটিয়ে দিল –
আমি ডাইনী আছি;
আমি থাকলে নাকি মড়ক লাগবে গাঁয়ে;

সদ্য হওয়া শিশুটি মরে গেলে ,
আমাকে দেখিয়ে বলে–
ডাইনীর নজর লেগেছে;
নজর তো ওদের আমার উপর;
আমার জমিটার উপর;
তাই ওরা আমার মাথা নেড়া করিয়ে,
নেংটো করে পুরো গাঁয়ে ঘোরালো ;
সেদিন আমার চিৎকার, আমার কান্না
কেউ শোনেনি;
শুনতে চায়নি .…
সব কিছুই চাপা দিয়ে ছিলো ঢেরির শব্দে;
সব কিছু …
ওরা বের করে দিলো গাঁয়ের বাইরে এ জঙ্গলে,
এ নদী তীরে, নির্জনে;
ওরাই করে দিয়েছে ছিলো এ ঝুপড়িটা;

এখন ওরা এখানে আসে ;
চাল, ডাল, তেল, সবজি … দিয়ে যায়;
আর খেয়ে যায় …
এক এক করে ওরা আসে দুপুরে, রাতে;
এখন আমি শাড়ি পাই, টাকা পাই;
পাই ওষুধ ;
আর ওদের ঘামের গন্ধ …
কিন্তু, গাঁয়ে ঢুকতে দেয়না;
দেবেনাও কোনদিন;

আমি ডাইনী না আছি বাবু !
আমি ডাইনী না আছি …

Loading

One thought on “কবিতা- ডাইনী না আছি

Leave A Comment